মাগুরা সংবাদ
ক্রিকেট জগতে অসামান্য এক প্রতিভাধর ব্যক্তিত্বের নাম মাশরাফি বিন মর্তুজা যার ডাক নাম কৌশিক। সহজেই মানুষকে আপন করে নেয়ার প্রবণতা অত্যন্ত প্রখর তাঁর মাঝে। নড়াইলের চিত্রা নদীতে সাঁতরে বেড়ানো দুরন্ত সেই কৌশিক একসময় হয়ে উঠলেন ক্রিকেটের আইকন, ‘ক্যাপটেইন অব এশিয়া’ খ্যাত বাংলাদেশের গর্ব, সকলের ভাই। দেখতে দেখতে পার করে ফেলেছেন জীবনের ৩৫টি বসন্ত। আজ নড়াইল এক্সপ্রেস’র ৩৬তম জন্মদিন। ১৯৮৩ সালের এই দিনে নড়াইলের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় তারকা মাশরাফি। তবে শুধু মাশরাফিরই নয়, মজার বিষয় হলো তাঁর ছেলে সাহেলের জন্মও একই দিনে। ভাগ্যবান বাবা তিনি। আরও সৌভাগ্যবান তাঁর ছেলে সাহেল এমন এক পিতার সন্তান হয়ে জন্মেছে সে। আর সবচেয়ে বেশি ভাগ্যবান বাংলাদেশের ক্রিকেট প্রেমিরা, যাদের গর্বের মাত্রা অনেক বেশি বৃদ্ধি করেছে এই ক্রিকেটার।
ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে ২০০১ সালের ৮ নভেম্বর শুরু হওয়া জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে অভিষেকেই নিয়েছিলেন ৪ উইকেট। একই বছর ২৩ নভেম্বর ওয়ানডে ক্রিকেটে মাশরাফির অভিষেক হয় ফাহিম মুনতাসির ও তুষার ইমরানের সঙ্গে। অভিষেক ম্যাচে মোহাম্মদ শরীফের সঙ্গে বোলিং ওপেন করে তিনি ৮.২ ওভারে ২৬ রান দিয়ে নেন ২টি উইকেট। ওয়ানডে ও টেস্ট ক্রিকেটে দুই ফরম্যাটেই গ্রান্ট ফ্লাওয়ার ছিলেন মাশরাফির প্রথম শিকার! সেই যে শুরু পথচলা, এরপর নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে ১৭টি বছর পার করে ফেলেছেন ক্যারিয়ারের।
ইনজুরি যেন তার আজন্ম সঙ্গী। ক্যারিয়ারের শুরু থেকে যেভাবে ইনজুরিতে কাটিয়েছেন- তাতে করে বাংলাদেশ হারিয়েছে তার গুরুত্বপূর্ণ ক্যারিয়ারের দিনগুলো। এই সময়গুলো তিনি যদি খেলদে পারতেন, তাহলে নিশ্চিত বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারতো। নিজের তৃতীয় টেস্ট খেলার সময়ই আঘাত পান হাঁটুতে। ফলে দীর্ঘ সময় ধরে ছিলেন মাঠের বাইরে- প্রায় দুই বছর। এরপর মাঠে ফিরেই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৬০ রানে নিয়েছিলেন ৪ উইকেট; কিন্তু আবারও আঘাত পেলেন হাঁটুতে। এ যাত্রায় তাকে মাঠের বাইরে থাকতে হয় প্রায় বছরখানেক।
২০০৬ সালে এক পঞ্জিকাবর্ষে মাশরাফি ছিলেন একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বিশ্বের সর্বাধিক উইকেট শিকারি বোলার। তিনি ওই বছর নিয়েছিলেন ৪৯ উইকেট। কিন্তু বারবার ইনজুরির থাবা তাকে মাঠের বাইরে ঠেলে দেয়। সব জয় করে তিনি মাঠে ফেরেন। সব দুঃখ, কষ্ট পেছনে ঠেলে তিনি ঠিকই এগিয়ে চলছিলেন; কিন্তু মাশরাফি চূড়ান্ত আঘাতটা পেলেন ২০১১ বিশ্বকাপের সময়। নিজ দেশের মাটিতে বিশ্বকাপের দলে ঠাঁই না পেয়ে। সেদিন নিজেকে ধরে রাখতে পারেননি। মিরপুরের অ্যাকাডেমি মাঠে অঝোর ধারায় কেঁদেছিলেন।
সম্ভবত তখনই আরও পোক্ত হয়েছিলেন মাশরাফি। নিজেকে করে নিয়েছিলেন মানসিকভাবে আরও শক্ত। হয়েছিলেন দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ এবং তিনি পেরেছেন। ৪ বছর পর তারই নেতৃত্বে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের মাটিতে বাংলাদেশ খেলেছিল কোয়ার্টার ফাইনাল। ঠিক যেন পরশপাথর হয়ে গেলেন মাশরাফি। তার ছোঁয়ায় হাতের মুঠোয় একের পর এক ধরা দিতে থাকলো সাফল্য। ভারত, পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকার মতো পরাশক্তিকে টেনে মাটিতে নামিয়েছেন তিনি।