সুবাসিত ফুল যখন অঙ্কুর রূপে

খেলাধুলা মাগুরা সদর

মাগুরা সংবাদ :

 

দিন-পঞ্জিকার বারোটি মাসের মাঝে বাঙালি জীবনে অধিকাংশ মাসেরই কোনো না কোনো বিশেষ গুরুত্ব আছে। এ ক্ষেত্রে মার্চ মাসটা যেনো সবার থেকে খানিকটা এগিয়ে। মুক্তিযুদ্ধে মার্চের গল্পগুলো কে না জানে? স্বাধীন বাংলাদেশ নামকরণ হয়েছে আজ প্রায় ৫০ বছর ছুঁই ছুঁই। কিন্তু মার্চের সেই গল্পগুলো, স্বাধীনতার গল্পগুলো এখনও সমান আবেদন নিয়েই বাঙালিকে নাড়িয়ে দেয়। কেননা গল্পগুলো আসলে গল্প নয়। বাঙালির ইতিহাস। বাঙালির স্বাধীনতার ইতিহাস।

‘৭১ সালের মার্চ মাসেই মুক্তি ও স্বাধীনতার দাবিতে আগুন ঝরাতে নেমেছিল বাঙালি। নিজেকে স্বাধীন ঘোষণা করেছিল। এঁকেছিল একটি নতুন পতাকা। পৃথিবীর মাটিতে একটি নতুন মানচিত্র এঁকেছিল। জন্ম দিয়েছিল স্বাধীন একটি দেশ- বাংলাদেশ। ঝাঁপিয়ে পড়েছিল মুক্তির যুদ্ধে। তারপর মুক্তির গান গাইতে গাইতে, যুদ্ধ করতে করতে, আপন প্রাণ বিলিয়ে দিতে দিতে, সদ্য আঁকা উত্তোলিত পতাকা গেঁথে দিয়েছিল ছাপান্ন হাজার বর্গমাইলে।

এই মাসটা শুধুই স্বাধীনলতার নয়; এই মাস বড়ই বৈচিত্র্যময়। এই বৈচিত্র্য কান্না হাসির দোলা মেশানো। মার্চ মাস বাঙালির জীবনে সুখের মাস, শোকের মাসও; এ যেনো বৈচিত্র্য ‘ভরা ভিন্নতার সুর’। মার্চ আমাদের স্বাধীনতার মাস, আমাদের মুক্তির মাস। মার্চ মাস মানেই আমরা বাঙালিরা কখনো হাসি আবার কখনো কাঁদি। এটা আমাদের জন্য যেন সুখের মাস, তেমনি শোকেরও মাস। যেমন আনন্দে আপ্লুত, তেমনি বেদনাতেও সিক্ত। রবীন্দ্রনাথের ভাষায় — ‘কান্না হাসির দোল দোলানো পৌষ ফাগুনের খেলা’

এই মহান মার্চ মাসে আমি বাঙালীর জন্য আনন্দিত হবার কয়েকটি কারণের একটি ১৯৮৭ সালের এই মহান মাসের ২৪ তারিখ মাগুরায় জন্মনেয়া এক শিশু। বাবা কৃষি ব্যাংক কর্মকর্তা মাশরুর রেজা ও মা শিরিন রেজার ঘর আলো করে জন্ম হয় দম্পতির প্রথম সন্তানের। যেই সন্তান আজ স্বাধীন বাংলার অন্যতম সেরা গৌরব। যাহোক, বাবা আদর করে নাম রেখেছিলেন ফয়সাল। কিন্তু বাবা কি কভুও ভেবেছিলেন, এই নামটা শুধুই তার একান্ত ঘনিষ্ঠজনের জন্যেই হয়ে থাকবে। কখনও কি স্বপ্নেও ভেবেছিলেন তার দেয়া নামটা প্রায় মুছে গিয়ে ছেলে তার পরিচিত হবে “সাকিব আল হাসান„ নামে। যা কখনো কখনো হারিয়ে যায় ময়না নামের অন্তরালে!

নিশ্চয়ই সাকিব আল হাসান নামটা শোনার পর তার পরিচয় সম্পর্কে নতুন করে আর জানতে হবেনা। তিনি লাল-সবুজের এই বাংলার সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ক্রীড়াবিদ ও বিশ্ব ক্রিকেটের এই বাঁহাতি জাদুকর। তিনি বাংলার লাখো তরুণদের আদর্শ, লাখো তরুণীর স্বপ্ন পুরুষ। যার চোখে চোখে রেখে স্বপ্ন দেখে ১৭ কোটি মানুষের ৩৪ কোটি চোখ। যার কণ্ঠে কথা বলে দেশের প্রায় প্রতিটি মুখ। স্বীয় কীর্তিতে যিনি বিশ্বের বুকে সমাসীন করে চলেছেন ছোট্ট এই দেশটার লাল সবুজের পতাকা।

বাংলার ক্রিকেটের এক মহা স্তম্ভ তিনি, ভূমিকাটা তার ঐতিহাসিক চীনের প্রাচীরের ন্যায় দূর্ভেধ্য-দূর্বার। অসংখ্য তারার ভিড়ে তিনি সূর্য্যসম; শুভ্র রশ্মি ছড়িয়েছে দূর দিগন্তে যার। শত মাইল দূরত্বেও নিদ্রাহীন বাঙালীর বাধন হারা উল্লাস আর বাধঁভাঙ্গা উচ্ছাসের উপলক্ষ তিনি, একবার, দু’বার নয়; অসংখ্য-অগণিত বার। বঙ্গদেশের অর্জনের গর্জনও তিনি; তিনিই প্রতিবাদের হুংকার! কখনো বিশ্বসেরার তকমায়, কখনো বা অপার সব কীর্তিগাঁথায় সাফল্যের শেখরে সমাসীন তুমি এক নাম। বিশ্ব ক্রিকেটে তিনি বাংলার পথিকৃৎ-পথ প্রদর্শক। বাঘের গর্জনে বিশ্ব কাঁপাতে পথচলা তার দিগন্ত জুড়ে! বাঁহাতের কারুকার্যে বিস্মিত বিশ্বকে পরিচয় দিয়েছেন আমি বাংলার; আমি বাঘেদের একজন!

অথচ গল্পটা হতে পারতো ভিন্ন। সাকিবও সেদিকেই হাঁটছিলেন। সাকিবের বাবার ইচ্ছা ছিলো ছেলে তার ফুটবলার হোক। একটা সময় সাকিব নিজেও ফুটবলার হতে চাইতেন। ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল কেনিয়াকে হারিয়ে আইসিসি ট্রফি জয় করে বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ পেলে সারা দেশে শুরু হওয়া ক্রিকেট জ্বরে আক্রান্ত হলেন সাকিবও। তাই শেষ পর্যন্ত সাকিব ক্রিকেটকেই বেছে নিলেন। তার সিদ্ধান্ত যে ভুল ছিল না তা আর বলার অপেক্ষা রাখে কি!!

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

সুত্রে প্রাপ্ত

Leave a Reply

Your email address will not be published.