মাগুরা সংবাদ:
রাজধানীর মালিবাগ এলাকায় গোপন বৈঠককালে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশের (হুজি-বি) খুলনা বিভাগীয় বিভিন্ন পদবীর ২ জন নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-৩।গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- সক্রিয় সদস্য আব্দুল কুদ্দুস (৫৭) এবং মো. সিরাজুল ইসলাম ওরফে সালাউদ্দিন (৩৫)।রোববার রাতে র্যাব-৩ অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে।র্যাব-৩ এর অধিনায়ক লে. কর্ণেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, গ্রেপ্তার আব্দুল কুদ্দুস হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশের (হুজি-বি)’র যশোর জেলার আঞ্চলিক ও কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক। পাশাপাশি তিনি যশোর জেলার শেকহাটি এলাকায় ‘ওবায় বিন কাব’ মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক হিসেবে শিক্ষকতা করেন।তার নামে ২০০৭ সালে ঝিনাইদহ জেলার সদর থানায় একটি হরকাতুল জিহাদ সংশ্লিষ্ট জঙ্গি মামলা হয়। ওই মামলায় আদালত তাকে যাবজ্জীবন কারাদন্ডাদেশ দেন। হয়। তিনি ২০০৭ সাল থেকে ১০ বছর ২ মাস সাজা ভোগ করে ২০১৮ সালে জেলহাজত থেকে মুক্তি পেয়ে আবারও হুজি-বি’র সাংগঠনিক কার্যক্রমের সাথে যুক্ত হয়ে দল পুনর্গঠনে যশোর,মাগুরা এবং নড়াইল জেলার বিভিন্ন মসজিদ ও মাদ্রাসায় নিয়মিত হালাখা (গোপন বৈঠক) করতে থাকেন।ওই হালাখাগুলোতে ঢাকা থেকে উচ্চ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ অংশগ্রহণ করতেন। হালাখার স্থানসমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল যশোর সীমা টেক্সটাইলের মসজিদ, যশোর নরের মহাসড়কের বেইলি ব্রিজের ডান পাশের ছোট মসজিদ, যশোর নিউমার্কেট এলাকার মারকাজ মসজিদ প্রভৃতি। ২০২২ সাল নাগাদ তিনি মোটামুটি ভাবে অত্র এলাকায় একটি শক্তিশালী হুজি-বি ইউনিট গঠন করেন।কুদ্দুস মাদ্রাসার যুবকদের মনে সমাজ বিদ্বেষী মনোভাব ছড়িয়ে দিতেন এবং প্রচলিত কলুষিত সমাজের বিরুদ্ধে জঙ্গি তৎপরতা চালানোর মাধ্যমে ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম করার কথা বলে তাদের মগজ ধোলাইয়ের মাধ্যমে হুজি-বি’তে অংশগ্রহণ করাতেন।র্যাব-৩ এর অধিনায়ক আরও বলেন, গ্রেপ্তার সিরাজুল ইসলাম ২০০১ সালে যশোর কোল্ডস্টোরেজের নাইটগার্ড হিসেবে চাকরি করতেন। চাকরি থাকা অবস্থায় ২০০১ সালে ওই কোল্ডস্টোরেজের নাইট গার্ডের তৎকালীন প্রধান মাধ্যমে হুজি-বিতে যোগদান করেন। তিনি যশোর জেলার প্রধান হুজি-বি’র রিক্রুটার এবং অর্থনৈতিক শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন।এছাড়াও বিদেশী বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের সাথে যোগসাজসে হুজি-বি’র অভ্যন্তরীণ ব্যয়ভার বহনের অর্থ যোগানের ব্যবস্থাও সে করতেন। তিনি ছদ্মবেশে রং মিস্ত্রির কাজ করে এবং হুজি-বি’র সাংগঠনিক কার্যক্রমের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সকল গোয়েন্দা নজরদারি চালান। ২০১০ সালে তার নামে একটি বিস্ফোরক আইনে মামলা হয়। ওই মামলায় যশোর কোতয়ালী থানা পুলিশ ২০১১ সালে তাকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায়। ২০১২ জামিনে মুক্ত হয়ে মামলার আর কোন শুনানিতে হাজির হননি। তখন থেকেই সে খুলনা বিভাগের বিভিন্ন এলাকায় পলাতক অবস্থায় আত্মগোপনে থেকে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালাতে থাকেন। গ্রেপ্তার ব্যক্তির প্রকৃত নাম মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম হলেও আত্মগোপনে থাকাকালীন সে সালাউদ্দিন ওরফে রিয়াজুল ইসলাম ওরফে বিশ্বাস ওরফে আমির ওরফে আব্দুল্লাহ প্রভৃতি ছদ্মনাম ব্যবহার করতেন।র্যাব জানায়, ২০২২ সাল থেকে জঙ্গি আব্দুল কুদ্দুস এবং সিরাজুল ইসলাম আত্মগোপনে থাকা আরও বেশ কয়েক জন শীর্ষ পর্যায়ের জঙ্গি সদস্যবৃন্দ মিলে একটি বড় ধরনের জঙ্গি হামলার পরিকল্পনা করছিলেন। সেই পরিকল্পনাকে সফল করতে ইতোমধ্যে তারা বেশ তৎপরতা চালাতে শুরু করেন এবং নিয়মিত হালাখার মাধ্যমে তাদের কর্ম পরিকল্পনা, প্রশিক্ষণ, কার্যপদ্ধতি এবং কর্মী সংগ্রহের কাজ ব্যপকভাবে বেগবান করেন।গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র্যাব গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে এবং নাশকতামূলক এই জঙ্গি গ্রুপটির কার্যক্রমের সন্ধান পায়। প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে কুষ্টিয়া, যশোর এবং মাগুরা এলাকায় তথ্য সংগ্রহের জন্য যায়। সোর্সের দেয়া তথ্য, গোয়েন্দা নজরদারি এবং ডিজিটাল সার্ভেইলেন্স এর মাধ্যমে মালিবাগ এলাকা থেকে গোপন বৈঠকে মিলিত হওয়ার সময় তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।