মাগুরায় মৃত ব্যক্তির নামে মামলা

মাগুরা সদর

মাগুরা সংবাদ:

রাষ্ট্রিয় তথ্য পাচার, মাদক বাণিজ্য, চাকুরীবিধি ভংগ, তথ্য গোপন করে চাকুরী লাভ , সাধারণ মানুষকে ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা আত্মসাৎ, অপরের জমি দখল, চোরাই গাড়ী কারবার,মাদক বাণিজ্য ও আয়ের সাথে সংগতিহীন অর্থ-সম্পদ অর্জনের অভিযোগে অভিযুক্ত ও পুলিশ হেডকোয়াটার্সসহ একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার তদন্তে থাকা এক পুলিশ কর্মকর্তার মায়ের আক্রোশমূলক মিথ্যে মিথ্যা মামলা ও পুলিশী হয়রানীতে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে মাগুরার একটি সম্ভ্রান্ত পরিবার।অসহায় পরিবারটি এই পুলিশকর্তার অত্যাচার ,নির্যাতন থেকে রক্ষা পেতে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরসহ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী,আইজিপি ,দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যানসহ একাধিক রাষ্ট্রিয় গোয়েন্দা সংস্থা বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেও তার হয়রানী থেকে মুক্তি পাচ্ছেন না। বাধ্য হয়ে তারা গণমাধ্যমের সাহায্য প্রার্থনা করেছেন।

একটি সূত্রে জানা যায় , এই পুলিশ কর্মকর্তার নাম মো: আরেফ আব্দুল্লাহ। তিনি বর্তমানে পুলিশ সুপার পদে কর্মরত আছেন। মাগুরা জেলার সদর উপজেলার ফুলবাড়ী গ্রামে তার বাড়ী।তিনি পুলিশী ক্ষমতা প্রয়োগ করে গত ৭ আগষ্ট ২০২২ তিনি তার মাতা সৈয়দা নাদিরা লাইজুকে বাদী করে মাগুরা সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা নং ০৮ তারিখ ০৭/০৮/২০২২ইং,ধারা-১৪৩/৪৪৭/৩২৩/৩০৭/৪২৭/৫০৬ ও ১১৪ দ:বি: আইন। মামলাটি রুজু করেন মাগুরা সদর থানার ওসি মো: নাসির উদ্দিন। এই মামলায় একজন মৃত ব্যাক্তিকেও আসামী করা হয়েছে। ওই আসামীর নাম মো: মোস্তফা জামান বাচ্চু (৬৫) । তিনি হার্ট এ্যাটাক করে গত ০৫/০৮/২০২২ ইং তারিখ রাত ১০.২০ মিনিটে মারা যান। অথচ: এই মামলায় তাকে জীবিত দেখিয়ে ১০ নং আসামী করা হয়েছে। একজন মৃত মানুষের নামে কিভাবে মামলা নিলেন এ প্রশ্নের কোন সদুত্তোর দিতে পারেন নি মাগুরা থানার ওসি মো: নাসির উদ্দিন।

মামলার অভিযোগে বলা হয়: গত ১১/০৭/২০২২ ইং তারিখে তিনি স্কুলের সম্বর্ধনা অন্ষ্ঠুান শেষে নিজ বাড়ীতে ফেরার পথে আসামীরা তার ওপর হামলা করে শাররীক জখম করে এবং বাড়ীর কাচের জানালা ,গাড়ীর গ্লাস ও টেবিল চেয়ার ভাংচুর করে। এতে তার ৪ লক্ষ টাকার ক্ষতিসাধিত হয়।তিনি এই মামলায় যাদের আসামী করেছেন তারা সকলেই তার দেবর , দেবরের স্ত্রী -পুত্র,-কন্যা ও নিকট আত্মীয় স্বজন। আসামীদের মধ্যে ৫ জন মহিলা আসামীও রয়েছে যাদের মধ্যে সবাই গৃহবধূ । এছাড়া যাদের আসামী করেছেন তাদের মধ্যে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের একজন আইনজীবি, বারবার নির্বাচিত একজন ইউপি চেয়ারম্যান,জেলা পর্যায়ের একজন রাজনৈতিক নেতা ও ঢাকায় বসবাসরত একজন ব্যবসায়ী রয়েছেন। যারা কেউই ঘটনার সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন না। অপরদিকে যে ৫ জন মহিলাকে আসামী করা হয়েছে তার সকলেই সুশিক্ষিতা পর্দানশীল মহিলা।এ মামলার বিষয়ে সরেজমিন খোজখবর নিতে গিয়ে এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তি ও ঘটনাস্থলের আশে পাশের প্রতিবেশিদের সাথে কথা বললে তারা জানান, ঘটনার দিন ও সময়ে ওই ধরনের কোন মারপিট ও ভাংচুরের কোন ঘটনা তার দেখেন নি বা শোনেনও নি। নাদিরা লাইজুর পুত্র পুলিশ অফিসার বিধায় প্রভাব খাটিয়ে থানায় এই মামলা দায়ের করেছেন বলেও তারা মন্তব্য করেন।মামলাটির বিষয়বস্তু অনুসন্ধানে দেখা যায়, বাদী তার মামলায় ঘটনার তারিখ উল্লেখ করেছেন ১১/০৭/২০২২ ইং তারিখ বেলা অনুমান ১১টার সময়। অথচ তিনি মামলা দায়ের করেছেন গত ০৭/০৮/২০২২ তারিখে। অর্থাৎ ঘটনা ঘটার ২৭ দিন পর তিনি মামলা দায়ের করেছেন। মামলা দায়ের করার এই যে প্রায় ১ মাস বিলম্ব এর কোন কারণ খুঁজে পাওয়া যায়নি। এই বিলম্ব হেতুই প্রমান করে যে মামলাটি মিথ্যা এবং সাজানো।
এমন একটি মিথ্যা ও সাজানো মামলা কেন মাগুরা সদর থানা গ্রহন করলেন? তার নেপথ্য কারণ অনুসন্ধানে জানা যায়, বাদীর পুত্র মো: আব্দুল্লাহ আরেফ বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর অতি:পুলিশ সুপার মর্যাদার একজন কর্মকর্তা। আর তার চাপেই মাগুরা থানার ওসি মো: নাসির উদ্দিন ঘটনার প্রায় এক মাস পর এই মামলা রেকর্ড করতে বাধ্য হয়েছেন।এ বিষয়ে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের একজন সিনিয়র আইনজীবি বলেন, ঘটনার প্রায় একমাস পর যুক্তিযুক্ত কারণ ছাড়াই এধরনের একটি মামলা গ্রহন করে মাগুরা থানার পুলিশ রুলস অব কোড ভংগ করেছেন। এই মামলাটির যদি ফাইনাল রিপোর্ট না দেওয়া হয় তবে আসামীপক্ষ যদি মহামান্য হাইকোর্টে প্রতিকার চান তাহলে পুলিশ কর্মকর্তারা ফেঁসে যেতে পারেন। আইনে এমনই বিধান রয়েছে।মামলাটির নেপথ্য কারণ কি?
এ প্রতিবেদনের তথ্য সংগ্রহকালে জানা যায় বাদী সৈয়দা নাদিরা লাইজু ফুলবাড়ী এইচ.এম.আর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি। তিনি ম্যানেজিং কমিটির রেজুলেশন ছাড়াই জেলা প্রশাসক বা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অনুমোদন না নিয়েই বিদ্যালয়ের সামনের দুটি বৃহত্তর গাছ গোপনে বিক্রি করে দেন। এই গাছ দুটি কাটার সময় সেটি সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানিয়ে দেন আসামী পক্ষের কেউ। তখন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে গাছ কাটা বন্ধ হয়ে যায়। আসামী পক্ষ এ বিষয়ে গত ১১/০৭/২০২২ ইং তারিখে নালিশী আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা নং সিআর ৬৯৫/২০২২ ধারা-১৪৩/১৪৭/১৪৮/৩২৩/৩০৭/৩৫৪/৫০৬(২)ও ১১৪ ধারা। মামলাটি বর্তমানে মাগুরা ডিবিতে তদন্তাধীন আছে।
এই মামলায় পুলিশ সুপার আবদুল্লাহ আরেফসহ আরো ২ জনকে আসামী করা হয়েছে। আর এ আক্রোশেই বাদী সৈয়দা নাদিরা লাইজু ঘটনার প্রায় ১ মাস পরে তার পুলিশ পুত্রের কুপরামর্শে এই মিথ্যা ও হয়রানীমূলক মামলা দায়ের করেছেন।
এখানেই শেষ নয়, এর আগে ১নং আসামী এরফান আহমেদ লিটুর বিরুদ্ধে এই এসপির ইন্ধনে বাংলাদেশের বিভিন্ন থানায় নারী পাচার ও টাকা আ´সাৎ এর অভিযোগে ১৬ টি মিথ্যা মামলা দায়ের করে হয়রানী করা হয়েছে।
এ বিষয়ে মাগুরা থানার ওসি মো: নাসির উদ্দিনের বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন ,আমি এখন বাইরে আছি, থানায় গিয়ে মামলার ফাইল না দেখে কিছু বলতে পারবো না।
এলাকার একটি সম্ভ্রান্ত পরিবারের ৫ মহিলা সদস্যসহ আরো ৮ জন গন্যমান্য ব্যক্তির বিরুদ্ধে এ রকম একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করে হয়রানি করার বিষয়ে এলাকার সমাজ সচেতন ব্যক্তিবর্গ তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। একই সাথে এই মিথ্যা মামলা থেকে নির্দোশ আসামীদের অব্যাহতি দিতে মাগুরার পুলিশ প্রশাসনের প্রতি দাবী তুলেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published.