দৃষ্টি এখন পাটুরিয়া-গোয়ালন্দ পদ্মা সেতুতে: দূরত্ব কমবে ঢাকা থেকে মাগুরা সহ কয়েক জেলার

বাংলাদেশ

 মাগুরা সংবাদঃ

নিজস্ব অর্থায়নে প্রথম পদ্মা সেতুর কাজ ইতিমধ্যে ৮১ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে; যা বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীসহ বিশ্ববাসীর কাছে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। ঠিক সেই মুহূর্তে সরকার ও উন্নয়ন সহযোগীদের দৃষ্টি পড়েছে দ্বিতীয় পদ্মা সেতুতে। এ প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য প্রাথমিকভাবে সম্মতি দিয়েছে বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। তবে সরকার একক বা যৌথ অর্থায়নকারী হিসেবে কোন সংস্থাকে বেছে নেবে সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। এরই মধ্যে বিশ্বব্যাংক ও এডিবির সঙ্গে সরকারের একাধিকবার আলোচনা হয়েছে। চলতি বছরেই আরেকবার সম্ভাব্যতা যাচাই করতে পারে বিশ্বব্যাংক।

আগে জাইকা এক দফা সম্ভাব্যতা যাচাই করেছে। এ ছাড়া প্রথম পদ্মা সেতুর মতো দ্বিতীয় পদ্মা সেতু বাস্তবায়নেও প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়ে পাশে থাকতে চায় চীন। এ নিয়ে চীন সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় ও সেতু বিভাগ সূত্র এসব তথ্য জানায়। সূত্র জানায়, এর আগে পদ্মা নদীর ওপর সেতু নির্মাণে জাইকা তাদের বিস্তারিত সমীক্ষায় চারটি স্থানকে সুবিধাজনক হিসেবে চিহ্নিত করে। এগুলো হলো- পাটুরিয়া-গোয়ালন্দ, দোহার-চরভদ্রাসন, মাওয়া-জাজিরা ও চাঁদপুর-ভেদরগঞ্জ।

এর মধ্যে মাওয়া-জাজিরা পয়েন্টে দেশের বৃহত্তম পদ্মা বহুমুখী সেতু বাস্তবায়নের কাজ ৮১ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে পাটুরিয়া-গোয়ালন্দ পয়েন্টে হবে দ্বিতীয় পদ্মা সেতু। এ সেতু নির্মাণ হলে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, মাগুরা, রাজবাড়ীর সড়ক যোগাযোগের দূরত্ব কমে আসবে। গোপালগঞ্জ, যশোর ও মাদারীপুর জেলার অংশবিশেষের দূরত্বও কমবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সেতু বিভাগের সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম এ প্রতিবেদককে বলেন, অর্থায়নকারী সংস্থা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে আলোচনা চলছে। শিগগিরই এ বিষয়ে সিদ্ধান্তে আসা যাবে বলে জানান তিনি।

প্রস্তাবিত এ সেতুর দৈর্ঘ্য হবে ৬ দশমিক ১০ কিলোমিটার। আর প্রকল্পটির প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩ হাজার ১২১ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। প্রকল্পের প্রস্তাব ইতিমধ্যে অনুমোদন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রথম দিকে এর ব্যয় ধরা হয়েছিল ১০ হাজার কোটি টাকার কিছু বেশি। সে সময় অবশ্য দৈর্ঘ্য ধরা হয়েছিল ৫ কিলোমিটার। পরে এর দৈর্ঘ্য বেড়ে যাওয়ায় নির্মাণ ব্যয় ৩ হাজার কোটি টাকা বেড়েছে বলে মনে করছে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়। সূত্র জানায়, এ প্রকল্পটি পবালিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) মাধ্যমেও বাস্তবায়নের বিকল্প খোলা রাখছে সরকার। এর আগে জাপান আন্তর্জাতিক কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) কাছে একাধিকবার প্রস্তাব দিলেও সংস্থাটি ইতিবাচক সাড়া দেয়নি। এ ছাড়া কিছুদিন আগে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও ইসলামিক উন্নয়ন ব্যাংককেও অর্থায়নের প্রস্তাব দেয় সরকার।

কিন্তু সে আলোচনাও এগোয়নি নানা কারণে। তবে এবার বিশ্বব্যাংক ও এডিবি আগ্রহ দেখিয়েছে। কিন্তু প্রস্তাব চূড়ান্ত হতে আরও কিছু সময়ের প্রয়োজন বলে জানিয়েছে সেতু বিভাগ। এ ছাড়া চীন সরকার প্রযুক্তিগত সহায়তা দিতে সম্মত হয়েছে বলে জানা গেছে। ২০১১ সালের ২৭ অক্টোবর অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে প্রকল্পটি নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়।

২০১৩ সালের শুরুতে এ প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তা সম্ভব হয়নি। অবশেষে প্রায় সাত বছর পর আবারও আলোচনায় এসেছে দ্বিতীয় পদ্মা সেতু। এর আগে অর্থমন্ত্রী থাকাকালে আবুল মাল আবদুল মুহিত তার দেওয়া সর্বশেষ ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণায় দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণের স্বপ্নের কথা তুলে ধরেন। সেই সূত্র ধরেই এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া জোরদার করছে সরকার।

সূত্রে প্রাপ্ত

Leave a Reply

Your email address will not be published.