বিচার চেয়ে পুলিশ কর্মকর্তা মাগুরার সোবহানের বিরুদ্ধে স্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন!

মাগুরা সদর

মাগুরা সংবাদ:

খুলনা সদর থানার এসআই সোবহান মোল্লার বিরুদ্ধে প্রথম বিয়ে গোপন করে প্রেমের ফাঁদে ফেলে দ্বিতীয় বিয়ে, প্রমোশনের নামে ২০ লাখ টাকা যৌতুক গ্রহণ এবং আরও ১০ লাখ টাকা যৌতুক না দেওয়ায় নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। রবিবার দুপুরে (‌১৩ ফেব্রুয়ারি) খুলনা প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে দ্বিতীয় স্ত্রী ফারজানা বিনতে ফাকের (ক্ষমা) এ অভিযোগ করেন।

সংবাদ সম্মেলনে ফারজানা অভিযোগ করেন, এসআই সোবহান মোল্লা খুলনা মহানগরীর সোনাডাঙ্গা থানায় কর্মরত থাকাকালীন এসব অপকর্ম করলেও বারবার ওই থানার ওসি মমতাজুল হক তাকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েছেন। তার অপরাধ ধামাচাপা দিয়ে মীমাংসার নামে উল্টো তাদেরকে আইনের আশ্রয় নেওয়া থেকে বিরত রেখেছেন। এমনকি থানায় মামলা করতে গেলেও না নিয়ে বারবার তাকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। যে কারণে ন্যায় বিচার পেতে বাধ্য হয়ে তিনি স্বামীর বিরুদ্ধে আদালতে দুটি মামলা করেছেন। কিন্তু দুই মামলার আসামি হয়েও বহাল তবিয়তে রয়েছেন এসআই সোবাহান। উল্টো তার বাবাকে (শ্বশুর) দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা চুরির মামলা সাজানো হয়েছে। সোবহান মোল্লা মাগুরা সদর উপজেলার চন্দনপ্রতাপ গ্রামের আব্দুস সবুর মোল্লার ছেলে।

ফারজানা বিনতে ফাকের অভিযোগ করেন, এসআই সোবহান মোল্লা সোনাডাঙ্গা থানায় কর্মরত থাকাকালীন তার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন। পরবর্তীতে ২০২০ সালের ১২ মে তাকে প্রলুব্ধ করে নগরীর ১৮নম্বর ওয়ার্ডের কাজী অফিসে নিয়ে ৩ লাখ টাকা দেন মোহর নির্ধারণ করে বিয়ে করেন। কিন্তু পরে তিনি জানতে পারেন সোবহান মোল্লার প্রথম স্ত্রী ও দুটি সন্তান আছে। তখন তিনি এমএম সিটি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষার্থী হওয়ায় তার প্রতারণার বিষয়টি তিনি ধরতে পারেননি। কিন্তু বিষয়টি জানাজানি হলে তার ওপর নেমে আসে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। এক পর্যায়ে এসআই সোবহান মোল্লা তাকে কীটনাশক পানে আত্মহত্যা করতে প্ররোচনা দেন। এ কারণে তিনি মারাত্মক অসুস্থ হয়ে ২০২০ সালের ৩ থেকে ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। এমনকি তাদের বিয়ের প্রমাণ নষ্ট করতে তিনি রেজিস্ট্রার দেখার অজুহাতে ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাজী অফিসে গিয়ে রেজিস্ট্রারের ৬ নম্বর ভলিউমের ১৪ নম্বর পাতা ছিঁড়ে ফেলেন।

সোবহানের এসব কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করলে নিকাষ রেজিস্ট্রারকে (কাজী) জীবননাশের হুমকি দেন। এ বিষয়ে কাজীর সহকারী সোনাডাঙ্গা থানায় জিডি করতে গেলে তা গ্রহণ করা হয়নি। ফলে কাজী খুলনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন। যদিও থানার ওসির মধ্যস্থতায় ২০২০ সালের ১ ডিসেম্বর আবারও তাদের বিয়ে রেজিস্ট্রি করা হয়।

ফারজানা বিনতে ফাকের আরও অভিযোগ করেন, তার সুখের জন্য পিতা-মাতা ৫ লাখ টাকার মালামাল দেয়। কিন্তু তারপরও এসআই সোবহান ইন্সপেক্টর হিসেবে প্রমোশনের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ৫০ লাখ টাকা ঘুষ দিতে হবে বলে তার কাছে ২০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন। মেয়ের সংসারের সুখের জন্য তার পিতা দুই দফায় ১০ লাখ করে তাকে ২০ লাখ টাকা যৌতুক দিতে বাধ্য হন। এরপরও তার কাছে আরও ১০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করা হয়। কিন্তু তার পরিবারের পক্ষে আরও যৌতুক দেওয়া সম্ভব না হওয়ায় বিভিন্ন সময় তাকে নির্যাতন করা হয়। এমনকি কোলের শিশু ছেলের দুধ কিনে দেওয়ার কথা বলে সোনাডাঙ্গা থানায় ডেকে নিয়েও তাকে পিস্তল দিয়ে আঘাত করে মাথা ফাঁটিয়ে দেওয়া এবং আসামি পেটানোর লাঠি দিয়ে মারধর করা হয়। এতে তার মাথায় ১২টি সেলাই দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ করেন ফারজানা বিনতে ফাকের।

এসব ঘটনায় তিনি স্বামী এসআই সোবহানের বিরুদ্ধে গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর খুলনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করেন। এ খবর জানতে পেরে ওইদিনই সোবাহান তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ এবং তার পিতার কাছে ১০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন। না দিলে হুমকি দেন। এ ঘটনায়ও তিনি গত ২৭ ডিসেম্বর খুলনা মহানগর হাকিমের আমলি আদালত সোনাডাঙ্গায় মামলা দায়ের করেন। এ অবস্থায় তিনি মামলা তদন্তে পুলিশের অবৈধ প্রভাব বিস্তার এবং তাকে ও তার মা-বাবাকে হুমকি দিচ্ছেন এবং ক্ষতি করার চেষ্টা করছেন। ফলে তারা চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি স্ত্রী-সন্তানের অধিকার, নিরাপত্তা এবং ন্যায় বিচারসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। এদিকে, পুলিশের একটি সূত্র জানায়, এসআই সোবহান সোনাডাঙ্গা থানার মধ্যেও স্ত্রী ফারজানা বিনতে ফাকেরকে মারধর করেছেন।

স্ত্রীর অভিযোগ সম্পর্কে এসআই সোবহান বলেন, তাকে (ফারজানা বিনতে ফাকের) আমি দুই মাস আগে তালাক দিয়েছি। তারপর থেকে সে বিভিন্ন জায়গায় আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে। তিনি স্ত্রীর বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, সে (স্ত্রী) একদিন রাতে আমার গলায় ধারালো বটি ধরেছিল। এছাড়া আমার শিশু সন্তানকে আছাড় দিয়ে মাথা ফাটিয়ে দিয়েছিল। তাছাড়া যৌতুকের অভিযোগ সত্য নয় বলে এসআই সোবহান দাবি করেন।

এসআই সোবহানের স্ত্রীর অভিযোগের ব্যাপারে সোনাডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মমতাজুল হক বলেন, তারা প্রেম করে বিয়ে করেছে। এ বিষয়টি আমিসহ আমার ঊর্ধ্বতন কোনো কর্মকর্তা জানতেন না। এটা তাদের পারিবারিক ব্যাপার। তার (এসআই সোবহানের) আগের ঘরে বউ আছে, দুটি সন্তান আছে জানি। গণ্ডগোল ফ্যাসাদ করত জানি, কিন্তু আমার কাছে কোনো সময় মামলা করতে আসেনি, তাই রিফিউজ করার সুযোগ নেই। ফলে তাকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়ারতো কোনো প্রশ্নই আসে না।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published.