Uncategorized

মাগুরা জেলার মহম্মদপুর উপজেলায় ফসলি জমি কেটে অবাধে তৈরি করা হচ্ছে মাছের ঘের। দিন দিন আশঙ্কাজনকভাবে কমছে কৃষিজমি। একশ্রেণির ঘের ব্যবসায়ী কৃষকদের লোভনীয় প্রস্তাবের ফাঁদে ফেলে কৃষিজমি কেটে ঘের তৈরির মহোৎসব শুরু করেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কৃষকরা জানান, দীর্ঘ সময়ের জন্য কৃষিজমি লিজ নিয়ে ৭-৮ ফিট গভীর করে বাঁধ দিয়ে ঘের তৈরি করা হচ্ছে। আর অতিরিক্ত মাটি ইটভাটায় বিক্রি করে দিচ্ছে ঘের দস্যুরা। রাত-দিন বিরতিহীন চলছে ঘের তৈরির কাজ। স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন কোনোভাবেই থামাতে পারছে না ঘের দস্যুদের। মাঝেমধ্যে উপজেলা থেকে কর্মকর্তারা এসে কাজ বন্ধ করে দেন। কিন্তু দু-একদিন পরে আবারো শুরু হয় ঘের তৈরি। অদৃশ্য কারণে প্রশাসন আর খবর রাখে না।

সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, মহম্মদপুর উপজেলার স্থানীয় প্রভাবশালীর ছত্রছায়ায় ঘের দস্যু বাহিনী গড়ে উঠেছে। এরা কৃষকদের লোভনীয় প্রস্তাব দিয়ে বিভিন্ন ইরি-বোরো ব্লুকে কিছু জমি লিজ নিয়ে ঘের কাটা শুরু করে। এরপর ঘেরে জমি লিজ দিতে বাকি কৃষকদের নানাভাবে বাধ্য করা হয়।

দেখা যায়, অন্য কৃষকরা জলাবদ্ধতা, চাষাবাদে সমস্যা, ফসল করার পরিবেশ নষ্ট হয়ে যাওয়াসহ নানা সমস্যার কারণে ঘেরে জমি দিতে বাধ্য হন। এতে একশ্রেণির ঘের ব্যবসায়ী আঙুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছে। আশঙ্কাজনকভাবে কমছে কৃষিজমি। হুমকির মুখে পড়েছে খাদ্য নিরাপত্তা। বেকার হয়ে পড়ছেন কৃষিনির্ভর শ্রমজীবীরা। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসনের উদাসীনতা আর অবহেলার কারণে দিন দিন আরো দ্বিগুণ হচ্ছে ঘের তৈরির প্রবণতা।

ভূমি আইনের নিয়মনীতি উপেক্ষা করে আবাদি কৃষিজমিতে অবাধে চলছে ঘের খনন। তবে মহম্মদপুর উপজেলার পলাশবাড়ীয়া ইউনিয়নে ঘের খননের প্রবণতা বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ইউনিয়নের পলাশবাড়ীয়া গ্রাম ও মৌফুলকান্দি গ্রামে কৃষিজমিতে ঘের খনন করেছে ঘের দস্যুরা।

এখনে কয়েকটি ঘের খননের কাজ চলমান রয়েছে । বিভিন্ন সোর্স থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের ঘের খননের তথ্য দেয়া হলেও ঘের খনন বন্ধ করতে পেরেছেন- এমন উদাহরণ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। মাঝেমধ্যে প্রশাসনের পক্ষ থেকে লোক দেখানো অভিযান চলানো হলেও প্রকৃত পক্ষে ঘের খননের কাজ থামাতে পারছে না স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন। অনেক ক্ষেত্রে উপজেলা প্রশাসনের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশে ঘের খননের অভিযোগও করছেন স্থানীয় ভুক্তভোগীরা।

যেভাবে কৃষিজমিতে মাছ চাষ শুরু হয়েছে- খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে। স্থানীয় প্রশাসনকে তথ্য দেয়ার পরেও রহস্যজনক কারণে ঘের নির্মাণ থামাতে পারছে না প্রশাসন। নামমাত্র অভিযান পরিচালনা করেই দায় সারছেন, কাজের কাজ কিছুই হয় না।

কোনোভাবেই রক্ষা করা যাচ্ছে না কৃষিজমি। স্থানীয় প্রশাসন আরো কঠোর না হলে হুমকিতে পড়বে কৃষি। খাদ্য নিরাপত্তা হুমকিতে পড়বে। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নেয়া প্রয়োজন।

মহম্মদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, কৃষিজমি কেটে মৎস্য ঘের তৈরি করার অভিযোগে কয়েকজনকে জেলা জরিমানা করা হয়েছে। আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.