শ্রীপুরে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ:আহত ১৫, বাড়ি ঘর ভাংচুর-লুটপাট,পুলিশের গুলি নিক্ষেপ

শ্রীপুর

মাগুরা সংবাদ:

আশরাফ হোসেন পল্টু,শ্রীপুর,মাগুরা:


মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার খোর্দ্দরহুয়া ও সরইনগর গ্রামে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সোমবার সকালে প্রতিপক্ষের বাড়ি-ঘরে হামলা করে শতাধিক বাড়ি-ঘর ব্যাপক ভাংচুর ও লুটপাট করা হয়েছে। এ সময় হামলাকারীদের প্রতিহত করতে গিয়ে পুলিশ সদস্যসহ অন্ততঃ ১৫ জন নারী-পুরুষ মারাত্বক আহত হয়। আহতদের মধ্যে ৪ জনকে মাগুরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ শতাধিক শটগানের গুলি নিক্ষেপ করেছে।
এলাকাবসীর মধ্যে আলাউদ্দিনমোল্যা ও নেকবর মোল্যা জানান, এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে শ্রীকোল ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি আমীর হোসেন মোল্যার সাথে স্থানীয় আবু বক্কার মোল্যার মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিলো। এরই জের ধরে সোমবার সকালে ঈদের মাঠে টাকা তোলাকে কেন্দ্র করে আবু বক্কার মোল্যা, আমীর হোসেন মোল্যার সমর্থক নুরুল হোসেনকে মারধর করে। এঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। উত্তেজনার একপর্যায়ে আবু বক্কার মোল্যা, হাফিজুর রহমান, কনা, শাহিনুর রহমান আবু সাঈদ মন্ডল ও মহসীনের নেতৃত্বে শ্রীকোল, পূর্ব শ্রীকোল, খোর্দ্দরহুয়া, রামনগর, মিনগ্রামসহ ৫-৬ গ্রামের হাজার হাজার লোক দেশীয় অস্ত্র-সস্ত্র নিয়ে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী খোর্দ্দরহুয়া ও সরইনগর গ্রামের আমীর হোসেন মোল্যার সমর্থকদের বাড়ি-ঘরে হামলা চালিয়ে শতাধিক বাড়ি-ঘর ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট করে। এসময় হামলাকারীদের ধারাল অস্ত্রের আঘাতে সোহাগ শেখ (২৫), উসমান(৬০), আবু(২৫),হারেজ (৫০), নুরোল শেখ(৫০), আবু তালেব (৩০) ও ফুয়াদ (৩৫) মারাত্বক আহত হয় । সংবাদ পেয়ে শ্রীপুর থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শতাধিক শটগানের গুলি নিক্ষেপ করে। এলাকায় উত্তেজনা থাকায় এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
শ্রীকোলে ইউনিয়ন পরিষদের ১ নং ওয়াডের্র ইউপি সদস্য ও সরইনগর গ্রামের বাসিন্দা ফরিদুল ইসলাম বলেন, ঈদগায়ে নামাজ পড়ার পর টাকা তোলার সময় নুরোল শেখকে মারার জন্য প্রতিপক্ষ বক্কার মোল্যা ঘোষনা দেয়। এ ঘোষনার পরপরই মসজিদ থেকে লোকজন বের হতে না হতেই শ্রীকোল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোস্তাসিম বিল্লাহ সংগ্রামের নেতৃত্বে পার্শ্ববতী ৫-৬ গ্রাম গ্রাম থেকে হাজার হাজার লোক খোর্দ্দরহুয়া ও সরইনগর এ দুই গ্রামে হামলা করে শতাধীক বাড়ি-ঘর ব্যাপক ভাংচুর করে এবং এককোটি টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায় ।
এ বিষয়ে সরইনগর গ্রামের বাসিন্দা ও শ্রীকোল ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি আমীর আলী মোল্ল্যা বলেন, চেয়ারম্যান সংগ্রমের নেতৃত্বে খোর্দ্দরহুয়ার বক্কার, সরইনগরের রেজাউল ও শ্রীকোলের হাফিজ মেম্বরসহ অন্যান্য মাতব্বররা মিলে ঈদগায়ে টাকা তোলার অজুহাতে মসজিদে গোলমাল করে তার সামাজিক দলের এক, দেড় শত বাড়ি-ঘর ভাংচুর ও লুটপাট করে ।
তবে বিরোধী প্রতিপক্ষা আবু বক্কার মোল্যা বলেন, তিনি কোন ঝামেলাই করেনি বরং আমীর মোল্যার লোকজনই ঈদের মাঠে টাকা তোলা নিয়ে ঝামেলা বাঁধিয়েছে।
এ বিষয়ে শ্রীকোল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তাসিম বিল্লাহ সংগ্রাম ঔই গ্রামে হামলার বিষয়ে অস্বীকার করে বলেন, গত দ’ুদিনের মধ্যে তিনি খোর্দ্দরহুয়া ও সরইনগর গ্রামে প্রবেশ করননি । অথচ উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে তাকে এ ঘটনায় মিথ্যাভাবে জড়ানো হচ্ছে । তিনি আরোও বলেন, ঈদের দিন তিনি বরিশাটের নিজ গ্রামে দ্বিতীয় জামায়াতে নামাজ আদায় করেছেন।
শ্রীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মো: মাহাবুবুর রহমান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, রাজনৈতিক ইস্যুকে কেন্দ্র করে এ এলাকায় বেশ কয়েকদিন ধরে উত্তেজনা চলছিল । এরই রেশ ধরে ঈদের নামাজ শেষে পার্শ্ববর্তী চার-পাঁচটি গ্রাম থেকে একযোগে প্রচুর লোক এসে সরইনগর ও খোর্দ্দরহুয়া গ্রামে এসে হামলা করে ভাংচুর করেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশের শতাধিক শর্টগানের গুলি ছোড়া হয়েছে। বর্তমানে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
মাগুরার পুলিশ সুপার খাঁন মোহাঃ রেজোয়ান বলেন, ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে ইতোমধ্যে ৭ জনকে আটক করা হয়েছে। লুটকৃত ৫টি গরুও উদ্ধার করা হয়েছে। অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোরভাবে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলে তিনি জানান।
সংবাদ পেয়ে মাগুরা-১ আসনের সংসদ সদস্য এ্যাড.সাইফুজ্জামান শিখর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে দুঃখ প্রকাশ করেন এবং ক্ষতি গ্রস্থদের সার্বিক সহযোগিতা করার আশ্বাস প্রদান করেন এবং সেই সাথে দোষী ব্যক্তিদের সনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য প্রশাসনের নির্দেশ দেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published.