মাগুরায় অবাধে ‘শামুক’ নিধন: হুমকিতে ‘প্রকৃতির ফিল্টার’

মাগুরা সদর

মাগুরা সংবাদঃ

ধীর গতির জলজ প্রাণী শামুক নিধন হচ্ছে দ্রুত গতিতে। হুমকির মুখে জীব বৈচিত্র্য ও পরিবেশ। ছোট্ট এই প্রাণী রক্ষায় সরকারী ও বেসরকারী উদ্যোগ নেই। পরিবেশবিদগণ নীরব। ইতোমধ্যে সোনালি শামুকসহ কয়েক প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে গেছে। ২০১২ সালের এক প্রজ্ঞাপনে শামুককে বন্য প্রাণীর স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। বন্য প্রাণী সংরক্ষণ ও সুরক্ষা আইনে শামুক নিধন নিষিদ্ধ। তারপরও নিধন রোধ হয়নি। অবাধে বিক্রির পাশাপাশি শামুক পাচার হচ্ছে।

পানি দূষণ রোধ, পরিশোধন, জমির উর্বরা শক্তি বৃদ্ধি, পরিবেশের ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণ ও জীব বৈচিত্র্য ধরে রাখে জলজ প্রাণী শামুক। জলাভূমিতে জন্মে প্রাকৃতিকভাবেই বেড়ে ওঠে। বৃষ্টির দিনে গ্রামের পথঘাটে বাড়ির উঠানে উঠে আসে খুবই ধীর গতিতে চলা শামুক। যার আরেক নাম শম্বুক। সমাজ জীবনে, অফিসে, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ধীর গতিতে চলা কোন কিছুকে শামুকের সঙ্গে তুলনা করা হয়। বাগধারায় স্থান পেয়েছে। জলাশয়, খাল ও বিলের শামুক নিধন ও পাচার দুই-ই হচ্ছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মুনিরুল এইচ খান জানিয়েছেন, প্রতিটি প্রাণী একে অপরের ওপর নির্ভরশীল। শামুক নিধন হলে এর ওপর নির্ভরশীলতার অনেক প্রাণী খাদ্য সঙ্কটে পড়ে বিলুপ্তির খাতায় নাম লিখাবে। জমিতে থাকা শামুকের খোলস মাটিতে মিশে উর্বরা শক্তি বাড়িয়ে দেয়। জমির কীটপতঙ্গ (পোকামাকড়) খেয়ে ফসল রক্ষা করে শামুক। বেড়ে যায় উৎপাদন। শামুক নিধনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হচ্ছে পরিবেশের। প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা কঠিন হয়ে পড়ছে। বর্ষা থেকে হেমন্তের শেষ পর্যন্ত জলাভূমি ও আবাদি জমি কম বেশি ডুবে থাকে। সেখানেই প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেয় শামুক। অতীতে শামুক নিধন হতো না। প্রয়োজনও হতো না। দেশীয় মাছের অন্যতম খাদ্য শামুকের নরম ডিম। কৈ, শিঙ, মাগুর, ট্যাংরা, টাকি, শোল, পাবদাসহ অন্য মাছের খাবারের বড় একটি অংশ আসে শামুকের ডিম থেকে। তা না পেলে মাছের পোনা মারা যায়। শামুক নিধন হচ্ছে দেশের প্রতিটি জলাশয়ে। যশোর জেলার মনিরামপুর উপজেলার ভরতপুর গ্রামের মৎস্য চাষি আনছার গাজী বলেন, আমরা মাগুরা, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, ফরিদপুর প্রভৃতি এলাকা থেকে কখনো ওজন হিসেবে আবার কখনো বস্তা হিসেবে শামুক সংগ্রহ করি।

Leave a Reply

Your email address will not be published.