অযত্নে-অবহেলায় ধ্বংসের পথে ‘রাজা সীতারাম রায়ের প্রাসাদ’

মহম্মদপুর

মাগুরা সংবাদঃ

কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে ইতিহাসের সাক্ষী রাজা সীতারাম রায়ের প্রাসাদ-দুর্গটি । দীর্ঘ বছরের স্মৃতি নিয়ে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে জীর্ণদশায় দাঁড়িয়ে আছে মাগুরা জেলার মহম্মদপুর উপজেলায় প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী রাজা সীতারাম রায়ের প্রাসাদ-দুর্গটি । কীটপতঙ্গ, পোকামাকড়ের বসবাস ধ্বংসস্তূপের মতো দাঁড়ানো, এ বাড়িটি এলাকার লোকদের কাছে সীতারাম রাজার বাড়ি হিসেবে পরিচিত। কিন্তু অযত্নে আর অবহেলায় বিখ্যাত এ বাড়িটি ধ্বংসের পথে। মাগুরা সদর উপজেলা থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে মধুমতী নদীর তীরের একটি প্রত্নস্থান যা স্থানীয়ভাবে রাজবাড়ী পরিচিত, যা সপ্তদশ-অষ্টদশ শতাব্দীতে এখানে পত্তন হওয়া উন্নত এক জনপদের স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। মুর্শিদাবাদের নবাব সরকারের একজন আমলা সীতারাম রায় এ প্রাসাদ-দূর্গটি নির্মাণ করেছেন, যিনি আমলা থেকে জমিদারি এবং পরে স্বীয় প্রতিভাবলে রাজা উপাধি লাভ করেন। উপাধি লাভের পর সীতারাম রায় রাজার মতোই রাজ্য বিস্তার করতে থাকেন এবং সেনাবল বৃদ্ধি করে তিনি পার্শ্ববর্তী জমিদারদের ভূ-সম্পত্তি দখন করেন। তিনি নবাব সরকারের রাজস্ব প্রদান বন্ধ করে স্বাধীন, সার্বভৌম রাজার মতোই জমিদারিতে প্রবর্তন করেন নিজস্ব শাসনব্যবস্থা। জমিদারি সুরক্ষার পদক্ষেপ হিসেবে সীতারাম এ স্থানটিতে গড়ে তোলেন দুর্ভেদ্য দুর্গ, কাঁচারিবাড়ি, পরিখা পরিবেষ্টিত রাজপ্রাসাদ, পূজার্চনার জন্য দেবালয় নির্মাণ, জনহিতার্থে খনন করেন বেশ কিছু বিশালাকার জলাশয়। মাগুরা জেলার বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে তাঁর নামে কিছু এলাকা এবং পুকুর। তাঁর বাড়ির আশেপাশের বেশিরভাগ জায়গা সাধারণের দখলে চলে গেছে ও কিছু সরকারি স্থাপনা হিসেবে ব্যবহৃত হতে দেখা যায়। আশার কথা বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ এটি দেখভালের দায়িত্ব নিয়েছে। বাড়ির একটা অংশ প্রায় সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে অন্য অংশ যেটি অক্ষত আছে সেটিও মাটির নিচে অনেকটা ডেবে গেছে। বাড়ির সামনে একটি শিব মন্দির যা এখোনো সম্পূর্ণ অক্ষত অবস্থায় আছে! রাজা সীতারাম রায়ের প্রজা নির্যাতনের অনেক করুণ কাহিনী এখনও এলাকার সাধারণ মানুষের মুখে মুখে প্রচলিত রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.