মাগুরায় ফার্নিচারের রং দিয়ে আইসক্রিম

মাগুরা সদর

মাগুরা সংবাদঃ

মাগুরা জেলার কারখানায় ক্ষতিকর রং (এমনকি ফার্নিচারের রং) ও উপকরণ দিয়ে আইসক্রিম তৈরি হচ্ছে। চটকদার নাম দিয়ে আইসক্রিমের নামে মারাত্মক বিষ বাজারজাত করছে একশ্রেণির ব্যবসায়ী। ক্ষতিকর রং ও উপকরণে তৈরি এসব আইসক্রিম জেলার সর্বত্র স্কুল-মাদ্রাসাসহ হাটবাজারে দেদার বিক্রি হচ্ছে। সস্তা দামের আইসক্রিমের চাহিদাও বেশ বেড়ে গেছে । এছাড়া স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে প্রস্তুত করা হয় না এসব  আইসক্রিম। কারখানার পরিবেশ নোংরা। ফ্রিজগুলো পুঁতিদুর্গন্ধময়। এসব কারখানাতে তৈরি লাখ লাখ আইসক্রিম প্রতিদিন বিক্রি হচ্ছে স্কুল-মাদ্রাসার ছাত্রছাত্রী ও তাদের অভিভাবকদের কাছে। এমনকি হাটে-বাজারে খেটে খাওয়া মানুষও দুপুরে গরমের সময় এসব আইসক্রিম খেয়ে তৃপ্ত হবার চেষ্টা করেন। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে অবিলম্বে ক্ষতিকর আইসক্রিম উৎপাদনকারী কারখানাগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করার কথা বলেন অনেকে। গরমের সময় আইসক্রিম একটি জনপ্রিয় খাদ্যপণ্য। শিশুসহ সবশ্রেণির মানুষের কাছে এর জনপ্রিয়তা বিদ্যমান। এরই সুযোগে ব্যবসায়ীরা যেনতেনভাবে প্রস্তুত করে মানহীন আইসক্রিম বাজারজাত করেন। আর ক্ষতিকর উপাদান ও রং মিশ্রিত আইসক্রিম খেয়ে শিশুরা নানা অসুখে ভোগে। বিশেষত পেটের পীড়া প্রায় লেগেই থাকে। জেলায় অবশ্য ফুড পরিদর্শকসহ খাদ্যমান দেখভালের জন্য কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী থাকবার কথা। শুধু জেলা সদর নয়, উপজেলা পর্যায়েও খাদ্যমান নিয়ন্ত্রণ করতে কর্মকর্তা-কর্মচারী থাকেন। কিন্তু তাদের দৃশ্যমান তৎপরতা নেই বললেই চলে। ফলে যে যেভাবে পারছেন আইসক্রিম, বিস্কুট, চানাচুর, চকলেট, আচার প্রভৃতি বানিয়ে বাজারজাত করছেন। আইসক্রিম, চানাচুর, বিস্কুট প্রভৃতি খাদ্যপণ্যের কারখানার নোংরা পরিবেশ, মানহীন উপাদান, ক্ষতিকর রং ব্যবহারের অভিযোগ থাকলেও ফুড অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তৎপরতা তেমন দেখা যায় না বললেই চলে। এছাড়া জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের ফুড অফিসের রহস্যজনক নিরবতার অভিযোগ রয়েছে। এমন অভিযোগ কেবল মাগুরা জেলাতেই নয়। দেশের প্রায় সর্বত্র একই পরিস্থিতি পরিলক্ষিত হয়। কয়েক বছর আগে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বেশ তৎপর ছিলেন ভেজাল ও ভেজালকারীদের বিরুদ্ধে ঢাকায়। তার নাম শুনলে মহানগরী ঢাকার দোকানপাট, বাজার কখনও কখনও বন্ধ হয়ে যেত। বিশেষত ভেজালপণ্যের উৎপাদক ও বিক্রেতারা ভয়ে ভেগে যেত। কিন্তু রহস্যজনকভাবে প্রভাবশালী কর্তৃত্বপরায়ণদের দাপটে আলোচ্য ম্যাজিস্ট্রেটকে পর্যন্ত সে সময় প্রায় খামোশ হতে হয়েছিল। সেই রোকন-উদ-দৌলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নাম প্রায় সবার জানা। অবশ্য একজন রোকন-উদ-দৌলার পক্ষে ভেজালের সব জঞ্জাল সরানোর সামর্থ্য ছিল না। তবে কিছুসংখ্যক রোকন-উদ-দৌলা হলে এবং তাদের সঙ্গে কর্তৃপক্ষের সহায়তা থাকলে ভেজালের জঞ্জাল সাফ করতে খুব বেশি বেগ পেতে হতো না বলে মনে হয়। শুধু আইসক্রিম নয়, বিস্কুট, চকলেট, আচার, দইসহ আরও কয়েকপদের খাদ্যপণ্য তৈরি হয় মাগুরা জেলা শহর ও এর আশপাশে। এসবের কোনওটিরই মান সম্পর্কে নিশ্চয়তা নেই। শুধু মাগুরায় নয়, সারা দেশের মানহীন ভেজাল খাদ্যপণ্য, ওষুধ, প্রসাধনী, সার, কীটনাশক প্রভৃতির উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ অবিলম্বে বন্ধ হওয়া জরুরি। আর এটা প্রয়োজন জনস্বাস্থ্যের নিরাপত্তার স্বার্থেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published.