মাগুরা সংবাদঃ
রাজধানীর কলাবাগান এলাকার লেক সার্কাস আবেদ ঢালি রোডের বাসা থেকে ডিবি পরিচয়ে এক ট্রাভেলস ব্যবসায়ীকে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ওই ব্যবসায়ীর নাম শাহিনুর কাদির সুমন (৩৭)।
৩০ জুলাই বিকেল ৫টা ১০ মিনিটে এ ঘটনা ঘটে বলে জানায় সুমনের স্বজনরা।
সুমনের স্বজনরা জানান, ডিবি পুলিশের সিরিয়াস ক্রাইম শাখার সহকারী কমিশনার (এসি) রবিউল পরিচয় দিয়ে ঢালিবাড়ি আবাসিক ভবনে কয়েকজন এসে সুমনকে তুলে নিয়ে যায়।
তবে দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানায়, সিরিয়াস ক্রাইম শাখায় এ নামে কোনো এসি বা কর্মকর্তা নেই।
এ ঘটনায় বুধবার (৩১ জুলাই) রাতে কলাবাগান থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন সুমনের বড় ভাই সাগর। কলাবাগান থানায় জিডি নম্বর ১৩০৩। তবে তিনদিন পার হলেও শনিবার (৩ আগস্ট) সকাল পর্যন্ত তাকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
সুমনের বড় ভাই মো. মাহবুবুল কাদির সাগর অভিযোগ করেন, ঘটনার পর ৩১ জুলাই রাতে ভবনের সিসি ক্যামেরার ফুটেজসহ নানা প্রমাণ দিয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হলেও ঘটনার চার দিনেও কোনো হদিস মেলেনি তার ছোট ভাই সুমনের। এরপর রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিবি পুলিশের কার্যালয়ে গেলে সেখানেও কেউ তার সন্ধান জানাতে পারেননি। ডিবি পুলিশের দায়িত্বশীলরা জানিয়েছেন সুমন নামে কাউকেই তারা আটক করেননি। থানা পুলিশ এ বিষয়ে তেমন গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে বলে মনে হচ্ছে না। সুমনের কোনও খোঁজ-খবর না পেয়ে দিশাহারা এখন স্বজনরা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন কর্মকর্তার দ্বারে দ্বারে গেলেও আন্তরিক সহযোগিতা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেন নিখোঁজের বড় ভাই।
সাগর আরও বলেন, ৩০ জুলাই ৫টা ১০ মিনিটে ছয়-সাতজন সুমনের বাসায় আসেন। তারা বাসার বিভিন্ন আসবাব ও মালামাল তছনছ করেন। কোনো অভিযোগ না বললেও বাসা থেকে সুমনের ব্যবসায়ীক কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র নিয়ে যায়। যাওয়ার সময় কালো গ্লাসের টয়োটা হায়েস গাড়িতে (ঢাকা মেট্রো চ ৫৪-৪৪৪৬) করে তারা সুমনকে নিয়ে চলে যায়। তাদের বিস্তারিত পরিচয় এবং অভিযোগ ছাড়া আটকের বিষয়ে বলা হলে তারা বাসার অন্যদেরও ধরে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দেন।
এ সময় সুমন তার বিরুদ্ধে অভিযোগ জানতে চাইলে তার বাসাতেই বেদম মারপিট করা হয়। এক পর্যায়ে সুমনকে বাধ্য করে নিয়ে যায় তারা।
বাসার সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, রাস্তায় গাড়ি রেখে একদল লোক ৩০ জুলাই বিকেল ৫টা ১০ মিনিটে বাসার নিচে লিফটের সামনে অপেক্ষা করছিলেন। পরে তারা উপরে উঠেন। এরপর তারা ৬টা ১০ মিনিটে সুমনকে নিয়ে নিচে নেমে গাড়ির দিকে এগিয়ে যান। তারা সাধারণ পোশাকে ছিলেন। হাতে কোনো অস্ত্র বা ওয়াকিটকি ছিল না। তবে কোমড়ে অস্ত্র দেখেছেন বাসার লোকজন।
স্বজনরা বলছেন, বিভিন্নভাবে খোঁজ নিয়ে তারা জেনেছেন ডিবি পুলিশ সুমনকে ধরেনি। থানা পুলিশও কিছু বলতে পারছে না। সুমনের বিরুদ্ধে কোথাও কোনও মামলা বা জিডিও নেই। এ কারণে প্রশ্ন উঠেছে সুমনকে তাহলে তুলে নিল কারা? পরিবারের অভিযোগ, ব্যবসায়ীক বিষয়ে সুমনের সঙ্গে তার কয়েকজন বন্ধুর সম্প্রতি খারাপ সম্পর্ক বিরাজ করছিল। সেই বিরোধের জেরেও এ ঘটনা ঘটতে পারে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতোকত্তর শেষ করে ট্রাভেলস এজেন্সি ব্যবসা করছিলেন তিনি। তার স্ত্রী মাগুরায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকতা করেন। তিন বছর বয়সী একটি কন্যা শিশু নিয়ে স্ত্রী মাগুরায় থাকেন।
এ প্রসঙ্গে কলাবাগান থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ইয়াসির আরাফাত বলেন, এ বিষয়ে সুমনের বড় ভাই সাগর থানায় একটি জিডি করেছেন। বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি। এখন পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য কোনও অগ্রগতি নেই।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সিরিয়াস ক্রাইম শাখার ডিসি মীর মোদাচ্ছের হোসেন বলেন, তারা সুমন নামে এমন নামে কাউকে আটক করেননি। এছাড়া রবিউল নামে তাদের কোনো কর্মকর্তাও নেই।