ঝিনাইদহে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে অবৈধ ইটভাটা : পুড়ানো হচ্ছে হাজার হাজার মণ কাঠ

বাংলাদেশ

মাগুরা সংবাদঃ

মনিরুজ্জামান সুমন, জেলা প্রতিনিধি, ঝিনাইদহ :

ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে ঝিনাইদহের শৈলকুপায় অবৈধ ইটভাটা। পুড়ানো হচ্ছে হাজার হাজার মণ কাঠ। চারপাশের পরিবেশ দূষণের মধ্যে ফেলে কোনো ধরনের ভ্যাট, ট্যাক্সের ধার না ধেরে উপজেলায় চলছে প্রায় ২ ডজন অবৈধ ইটভাটা। নীতিমালা লঙ্ঘন করে লোকালয় ও কৃষিজমিতে গড়ে উঠেছে এসব অবৈধ ইটভাটা।
এসব ভাটায় লোক দেখাতে কয়লার স্তুপ সামনে রেখে পেছন থেকে পোড়ানো হয় প্রতিদিন শত শত মন কাঠ। ড্রাম চিমনি দিয়ে কাঠ পোড়ানোর ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ছে লোকালয়ে। অথচ ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩ অনুযায়ী, আবাসিক এলাকা ও কৃষি জমির এক কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা স্থাপন নিষিদ্ধ।
নিয়মানুযায়ী ইট ভাটায় যেখানে ১২০ ফিট গাথুনি চিমনী থাকার কথা সেখানে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে মাত্র ৫০ থেকে ৬০ ফিট ড্রাম চিমনীর মাধ্যমে ধোয়া উড়িয়ে পরিবেশের বিপর্যয় ঘটানো হচ্ছে। এছাড়াও ইটের সঠিক মাপ থাকার কথা ১০-৫-৩ ইঞ্চি। সেখানে পুড়ানোর পর ইটের মাপ ৮ থেকে ৯ ইঞ্চির বেশী পাওয়া যায় না।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার হাকিমপুর ইউনিয়নের বড়িয়া গ্রামে ইমরান ব্রিকস, মির্জাপুর ইউনিয়নের মহম্মদপুর গ্রামে স্টার ব্রিকস, হাকিমপুর ইউনিয়নের হরিহরা গ্রামে টিটু ব্রিকস,দুধসর গ্রামে মিলন ব্রিকস, শাহ ব্রিকস ও এমবিবি ব্রিকস, উমেদপুর ইউনিয়নের ষষ্টিবর গ্রামে বর্ষা ব্রিকস, পৌর এলাকার চতুড়া গ্রামে রাহুল এন্ড খুশি ব্রিকস, মাঠপাড়া এলাকায় বিএন্ডসি ও চুন্টি ব্রিকস, আউশিয়া গ্রামে শাকিব ও শান ব্রিকস, দিগনগর ইউনিয়নের সিদ্দি গ্রামে রবিন ব্রিকস, নিত্যানন্দপুর ইউনিয়নের বকশিপুর গ্রামে বিএমবিআর ব্রিকসসহ অন্যান্য ইটভাটাগুলো জনবসতি এলাকা এবং কৃষিজমির পাশে গড়ে উঠেছে। এদের মধ্যে অনেকেই ড্রাম চিমনি ব্যবহার করে। ভাটার মালিকের বিরুদ্ধে সরকারকে ভ্যাট ও ট্যাক্স না দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে।
শ্রমিকরা জানান, এক একটি ভাটায় প্রতিদিন কাঠ পুড়ানো হয় প্রায় ৩শ থেকে ৪শ মণ। ২৫টি ভাটায় প্রতিদিন কাঠ পোড়ানো হয় প্রায় সাড়ে ৭হাজার মণ। ভাটাগুলোর পাশে রয়েছে কলা বাগান, কপিখেত, মটর, বেগুন, ও ধানসহ ইত্যাদি সবজি খেত। আর ১০০ থেকে ১৫০ গজের মধ্যে রয়েছে জনবসতি।

ইটভাটার মালিকরা বলেন, ১৬ই ডিসেম্বর, ২৬শে মার্চ ২১শে ফেব্রুয়ারীসহ বিভিন্ন সরকারী প্রোগ্রামে চাঁদাসহ বিভিন্ন মাধ্যমে প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করেই তাঁরা এসব ইটভাটা চালাচ্ছেন। তবে প্রশাসন বলতে তারা কি বোঝাচ্ছেন তা স্পষ্ট করেননি।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানায়, দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি সরকারি অনুমোদন ছাড়াই লোকালয় ও আবাদি জমির পাশে ইটভাটা স্থাপন করে ব্যবসা চালিয়ে আসছেন। ভাটার শত শত বালু, মাটি ও ইট বহনকারী গাড়ী চলাচলের কারনে নষ্ট হচ্ছে গ্রাম গঞ্জের রাস্তা-ঘাট।

নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক অনেক কৃষক জানান, কৃষিজমিতে বা জমির পাশে এসব ইটভাটা স্থাপন করায় তাঁদের ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। প্রচন্ড ধুলাবালুর কারনে ভালো ফলন পাওয়া যায় না। এসব ইটভাটার মালিকেরা স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় তাঁরা প্রতিবাদ করতেও সাহস পান না।
কৃষকদের এসব অভিযোগ সঠিক হিসেবে উল্লেখ করে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জয় কুমার কুন্ডু বলেন, কৃষি জমিতে ইটভাটা স্থাপন করা ঠিক না। ফসলি জমির পাশে ইটভাটা স্থাপন করায় ফসলের উৎপাদন কম হয়। ইটভাটা স্থাপনের ক্ষেত্রে এসব লক্ষ রাখা উচিত বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।

এ ব্যাপারে উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা উসমান গনি জানান, ইট ভাটায় কাঠ পোড়ানো সম্পূর্ণ অবৈধ। সেই সাথে ড্রাম চিমনি ব্যবহারের সুযোগ নেই। অবৈধ ইটভাটার কারনে পরিবেশ দূষন হয় বলে তিনি মন্তব্য করে বলেন, সকল অবৈধ ইটভাটায় অভিযান চালিয়ে অচিরেই তা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ জানান, ইতিমধ্যেই অবৈধ ইট ভাটায় অভিযান শুরু হয়েছে। অনেক ভাটার ড্রাম চিমনি উচ্ছেদ ও জরিমানা করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে জেলা ও উপজেলার সকল অবৈধ ইটভাটায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.