মাগুরা সংবাদঃ
আজকে আমি যখন এই ঘটনাটা লিখতে বসেছি রাত একটা বেজে পঁচিশ মিনিট । আমার ঘুম আসছে না, মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে একটি অদ্ভুত ঘটনা। যা আমার জীবনে দেখা একমাত্র অসহায় মায়ের বুকফাটা আর্তনাদ এর ঘটনা। মানবতা কিভাবে মুখ থুবড়ে পড়ল তা আজকের ঘটনা না দেখলে হয়তো বা বুঝতেই পারতাম না। আমি দেখেছি ফিলিস্তিনির সেই ছোট্ট শিশুর উপরে ইজরাইলি সৈন্যদের অমানবিক নির্যাতন, তখনও আমার এতটা কষ্ট লাগে নি, কেননা তারা জেনে বুঝেই হয়তোবা ময়দানে এসেছিল, মৃত্যু তাদের নিকটেই। কিন্তু আজকের যে ঘটনা! একজন অবুঝ নবজাতক, যার বয়স কিনা মাত্র ১৬৫ দিন ।সে কি কখনো ভেবেছিল মাত্র ১৬৫ দিনের দিনের মাথায় তাকে চলে যেতে হবে না ফেরার দেশে, ভেবেছিলো কি কখনো তাকে খুন হতে হবে পরম মমতার কোলে বেড়ে ওঠা আপন দাদির এতটা কাছে থেকেও?
আর মা, মা তো
বাকরুদ্ধ, নিজস্বতাই হারিয়ে ফেলেছে,
মানুষ কতটা চাপের মধ্যে থাকলে তার নিজের সন্তানের খুনির বিচার চাওয়ার সৎ সাহস টুকু ও হারিয়ে ফেলে? সত্য কথা বলার ন্যূনতম আত্মবিশ্বাস টুকু ও থাকে না।
এতক্ষণ আবেগবশত হয়তো অনেক কথা লিখে ফেলেছি। আমার আবেগ যদি আমাকে দিয়ে এসব কথা বলায়ও, তবে মনে হয় আমি কোন ভুল কথা বলছি না, আমি মনে করি একজন বিবেকবান মানুষ হিসেবে, একজন সৎ ও সাহসী নাগরিক হিসেবে আমাকে রুখে দাঁড়াতে হবে এবং সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে কথা বলতে হবে। সারা জীবন সত্য ন্যায় ও নিষ্ঠার কথা শুনে এসেছি বাবার মুখে, চাচার মুখে, পরিবারের মুখে, স্কুল শিক্ষকের মুখে, মুরুব্বিদের মুখে, গুনি জনের মুখে, রাজনৈতিক নেতার মুখে। চেষ্টা করেছি সর্বদা সত্য ন্যায় ও নিষ্ঠার পথে চলার জন্য, কতটুকু চলতে পেরেছি সেটা আল্লাহ ভালো জানেন তবে চেষ্টার কোনো ত্রুটি ছিল না।আজকে হয়তোবা আমার এই কথাগুলো শোনার পর অনেকের মনে হতে পারে আমি ফাঁকা মাঠে বুলি ছাড়ছি, আসল কথা হচ্ছে আমার বিবেক আমাকে শান্ত হতে দিচ্ছে না। আমার রক্ত টগবগ করে জ্বলছে। আজকের সমাজ, আজকের সমাজ ব্যবস্থা মানবতার ওপর থুতু ফেলছে, যেটা কিনা একজন মানুষ হিসেবে অন্তত আমি মেনে নিতে পারি না, তাই আবেগ তাড়িত হয়ে কথাগুলো না লিখে পারলাম না।
এখন আমি আসল ঘটনায় যাই।
আমার গ্রাম! আমার গ্রামের নাম খালিয়া বিনোদপুর ইউনিয়ন, মোহাম্মদপুর থানার, মাগুরা জেলায় অবস্থিত।
এই খালিয়া গ্রামের পূর্ব দিকে অবস্থিত মন্ডলপাড়া। এ মন্ডল পাড়ার বাসিন্দা আতর মন্ডলের ছেলে জিয়াউর রহমান মণ্ডল আজকে তার মাত্র ১৬৫ দিন বয়সের মেয়ে পরিকল্পিতভাবে খুন হয়েছে। যে ঘটনাটা আজকে গ্রামের কিছু লোক সেটাকে একটি অপমৃত্যু হিসেবে চালিয়ে দিতে চাচ্ছে। যেটা একজন মানুষ হিসেবে, একজন মানবিক মানুষ হিসেবে আমি মেনে নিতে পারছি না, বিধায় আজকের এই লেখালেখিটা করছি। জানিনা এই লেখালেখির দরুন কোন ফায়দা হবে কিনা! তবে আমার জায়গা থেকে আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।
যে ১৬৫ দিনের বাচ্চাটা মারা গিয়েছে বা খুন হয়েছে, এই বাচ্চার আম্মা আজকে সকাল বেলা ডিগ্রী পরীক্ষা দেওয়ার উদ্দেশ্যে মাগুরায় যায়, এবং পরীক্ষা দিয়ে যখন বাড়িতে ফিরে বাড়িতে ফিরে রুমে ঢুকে দেখে তার বাচ্চা নেই। তখন সে তার শাশুড়ির কাছে যায় এবং জিজ্ঞেস করে, আম্মা আমার বাচ্চা কোথায়? তার শাশুড়ি বলে আমি তো এইমাত্র তাকে ঘুম পাড়িয়ে রেখে এলাম, দেখো রুমে আছে। সে বলেছে যে আমার বাচ্চা তো নেই তখন চারিদিকে মাইকে এনাউন্স করা হয় যে, ছেলে ধরা বাচ্চাটাকে চুরি করে নিয়েছে, চারিদিকে নজরদারি বাড়ানো হয়, সবাই খোঁজাখুঁজি শুরু করে, এবং অবশেষে প্রায় ৩০ মিনিট পর তাকে খালের পানিতে ভেসে থাকতে দেখা যায়। পাশেই পানির উপরে পাওয়া যায় একটি নীল রংয়ের শাড়ি, শাড়িটি ছিল বাচ্চাটির দাদির। এবং তাকে যখন পাওয়া যায় তার মুখ দিয়ে অনেক ফেনা যুক্ত সাদা কিছু বের হতে দেখা যায়। এবং সেগুলো পানিতে ভাসতে দেখা যায়। আমি একজন প্রত্যক্ষদর্শী (ফেনাযুক্ত সাদা কিছুর)। আমি যা দেখেছি সেগুলো এখানে বলছি। তারপর যখন বাচ্চাটাকে পানি থেকে তোলা হয় তোলার পর গ্রামের যে সমস্ত চেষ্টা, বাঁচানোর জন্য, মাথায় নিয়ে ঝাকি দেওয়া, তারপর আগুন জ্বালিয়ে সেক দেওয়া, গায়ে লবণ মাখিয়ে রাখা ইত্যাদি, এগুলো করা হয়। এরপর ডাক্তার কে খবর দেওয়া হয়, ডাক্তার ঝুঁকি নিতে পারবে না জানানোয় কোন উপায়ন্তর না দেখে বলা হয় মাগুরাতে নিয়ে যাওয়ার জন্য, এবং মাগুরা নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে। আমি যখন এগুলো শুনলাম তারপর আমি বাচ্চাটির দাদির সঙ্গে একটু কথা বলার চেষ্টা করলাম এবং শুনলামও।
তার ভাষ্যমতে, সকাল বেলা তার বৌমা বা ছেলের বউ যখন পরীক্ষার উদ্দেশ্যে যায়, তখন তার কাছে বাচ্চাটিকে রেখে যায়। এবং সে সারাদিন বাচ্চাটিকে সাথে সাথে রাখে। (উল্লেখ্য তার বাবা মাঠে কাজ করে, গরু ছাগল পালন করে।) সারাদিন এর ভেতর কয়েকবার তার বাবা ও বাড়িতে আসে এবং গরুর তোলে তারপর বাচ্চাটিকে কোলেও নেয় আবার বাচ্চাটির দাদীর কাছে রেখে সে বিকালবেলা ব্যাডমিন্টন খেলার উদ্দেশ্যে বের হয়। বিকাল সাড়ে পাঁচটার দিকে বাচ্চাটিকে শুয়ার ঘরে রেখে বাচ্চাটির দাদী বাথরুমে যায়। এবং সে নাকি বাথরুম থেকে শব্দ শুনতে পাই কেউ একজন (উল্লেখ্য বাথরুমে তার সময় লেগেছিল দুই থেকে ৩ মিনিট) গেটে শব্দ করছে। সে বাইরে এসে কাউকে না দেখে গেট বন্ধ করে রেখে রান্না ঘরে যায়। এর মধ্যে তার বৌমা ফিরে আসে পরীক্ষা দিয়ে মাগুরা থেকে এবং বাড়িতে ফিরে রুমে ঢুকে দেখে তার বাচ্চা নেই। তখন সে তার শাশুড়ির কাছে যায় এবং জিজ্ঞেস করে, আম্মা আমার বাচ্চা কোথায়? তার শাশুড়ি বলে আমি তো এইমাত্র তাকে ঘুম পাড়িয়ে রেখে এলাম, দেখো রুমে আছে। সে বলেছে যে আমার বাচ্চা তো নেই অতঃপর বাচ্চাটিকে আর পাওয়া যায়নি।
রাত দশটায় পুলিশ আসলো পুলিশ এসে বাড়ির সবাইকে একটি কক্ষের মধ্যে নিল, আলোচনা হল। বের হয়ে ফোন করতে শুরু করলো এএসপি, সার্কেল এস পি, ওসি সহ অন্যান্য কর্মকর্তাদের। তার ভাষ্য ছিল এরকম:
স্যার আমি মোহাম্মদপুর থানার এসআই আনোয়ার বলছি, স্যার খালিয়া আসছিলাম একটা ৫ মাস ১৪ দিন বয়সের শিশু কে, কে বা কারা বাড়ি থেকে নিয়ে পাশের খালে ফেলে গিয়েছে, এবং সেখানে শিশুটির মৃত্যু হয়েছে। বাড়ির কেউ কারো প্রতি অভিযোগ করছে না বা এরা তদন্ত হোক সেটা চাইছে না।
পুলিশ একটি সাদা কাগজে সকলের স্বাক্ষর নিল, প্রায় ১২ জনের মত অতঃপর বলল আগামীকাল সকাল ৮ টার আগে লাশ মাটি হবে না এবং আমার অনুমতি দেওয়ার পর লাশ মাটি হবে।
আমি পুলিশকে জিজ্ঞেস করলাম যে, তদন্ত হবে না? পুলিশ বললো অভিযোগ না করলে আমরা কিভাবে তদন্ত করব? আমার প্রশ্ন : তাহলে এভাবে একটা জীবন্ত শিশু পরিকল্পিতভাবে খুন হল কিন্তু তার বিচার হবে না
আমার প্রশ্ন হচ্ছে :
*১৬৫ দিনের একটা বাচ্চা তো আর হাঁটতে পারে না যে হেঁটে হেঁটে খালে যাবে?
*বাচ্চার পাশে একটি শাড়ি পাওয়া গেছে এই শাড়ি টা কার?
*বাচ্চাটি যদি পানিতে পড়ে মরবে পানি খেয়ে বাচ্চাটির পেট ফুলে থাকবে, সেটা ছিল না কেন?
*তদন্ত কেন হবে না?
*গেট বন্ধ করে এসে কেন বাচ্চাটিকে দেখল না যে বাচ্চাটি রুমে আছে কিনা?
*বাচ্চাটির মা কেন মুখ খুলছে না বা কেন তার সন্তানের বিচার চাইছে না?
* পুলিশই বা কেন ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে চাচ্ছে?
* ওই ফ্যামিলির অন্য লোকজন কেন ঘটনার তদন্ত করতে দিবে না?
* বাচ্চাটির মামার বাড়ির লোকজন ই বা কেন তদন্ত করতে আগ্রহী নয়?
*বাচ্চার বাবা এ ব্যাপারে কথা বলতে রাজি নয় কেন?
*৫ মিনিটের মধ্যে বাচ্চাটি খালে কিভাবে গেল?
আমিএই ন্যাক্কারজনক ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি ও তদন্ত সাপেক্ষে সঠিক বিচার চাচ্ছি
ফয়সাল নামের এক ব্যাক্তি আজ সোমবার সকালে ফোনালাপে মাগুরা সংবাদকে বিষয়বস্তুটি তুলে ধরার অনূরোধ করেন।