সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত ঐতিহাসিক বৈঠক শেষে যৌথ ঘোষণায় স্বাক্ষর ট্রাম্প ও কিমের

আন্তর্জাতিক

সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত ঐতিহাসিক বৈঠক শেষে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন একটি যৌথ ঘোষণায় স্বাক্ষর করেছেন।

 

সিঙ্গাপুরের স্যান্টোসা দ্বীপের হোটেল দ্য ক্যাপেলোতে ট্রাম্প ও কিমের একান্ত বৈঠক ও পরে দুই পক্ষের শীর্ষ কর্মকর্তাদের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এরপর গুরুত্বপূর্ণ নথিতে সই করার ঘোষণা আসে। একান্ত বৈঠক শেষে দুজনকে হাসিমুখেই বের হতে দেখা যায়।

 

চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের পর হোটেল বারান্দায় কিমের সঙ্গে দাঁড়িয়ে কথা বলার সময় ট্রাম্প বলেন, আমরা আবার বৈঠক করবো। এই যৌথ ঘোষণা সম্পর্কে ট্রাম্প বলেছেন, এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ এবং বেশ ব্যাপক এবং তিনি ও চেয়ারম্যান কিম এটি স্বাক্ষর করে দুজনেই খুব সম্মানিতবোধ করছেন।

 

কোরীয় উপদ্বীপে পূর্ণ পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের অঙ্গীকার করেছে উত্তর কোরিয়া।

 

ট্রাম্প-কিম বৈঠকের প্রধান চার পয়েন্ট:

 

১. যুক্তরাষ্ট্র ও গণপ্রজাতন্ত্রী কোরিয়া নতুনভাবে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক স্থাপনে উদ্যোগী হবে, যাতে দুই দেশের মানুষের দীর্ঘমেয়াদি শান্তি ও উন্নতির বিষয়টি প্রতিফলিত হবে।

 

২. কোরীয় উপদ্বীপে স্থিতিশীল ও শান্তিপূর্ণ শাসনব্যবস্থা অব্যাহত রাখতে যৌথভাবে কাজ করবে যুক্তরাষ্ট্র ও গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রী কোরিয়া।

 

৩. ২৭শে এপ্রিল ২০১৮’র পানমুনজাম বিবৃতি অনুযায়ী কোরীয় উপদ্বীপকে সম্পূর্ণ পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের অঙ্গীকার রক্ষা করবে গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রী কোরিয়া।

 

৪. যুক্তরাষ্ট্র ও গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রী কোরিয়া যুদ্ধবন্দীদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে ভূমিকা রাখবে এবং এরই মধ্যে যেসব যুদ্ধবন্দী চিহ্নিত হয়েছেন তাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া দ্রুত শুরু করবে।

 

 

 

চুক্তিতে সই হওয়ার পর দুই দেশের পক্ষ থেকে পরস্পরের প্রতি প্রশংসা করা হয় এবং ছবি তোলা হয়। বৈঠক বিষয়ে ট্রাম্প এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, অত্যন্ত ঘটনাবহুল ২৪ ঘন্টা পার করলাম আমরা। সত্যি বলতে ঘটনাবহুল তিনটি মাস পার হলো।

 

উত্তর কোরিয়া সম্পর্কে তিনি বলেন, অবিশ্বাস্য একটি জায়গা হিসেবে নিজেদের প্রকাশ করার সম্ভাবনা আছে তাদের।

 

ট্রাম্প বলেছেন, পরিবর্তন আসলেই সম্ভব। চেয়ারম্যান কিমের সঙ্গে আমার বৈঠক আন্তরিক, গঠনমূলক আর খোলামেলা ছিল। কিম এরইমধ্যে প্রধান মিসাইল পরীক্ষার জায়গা ধ্বংস করছেন। তবে এই বিষয়ে বিস্তারিত তাদের বিবৃতিতে নেই। বিবৃতি তৈরি হওয়ার পর দুই নেতা এ বিষয়ে একমত হন।

 

একটি প্রশ্নের উত্তরে ট্রাম্প বলেন, কিম খুবই প্রতিভাবান। তিনি খুব কম বয়সে একটি দেশের ক্ষমতা নেন ও কঠোরভাবে দেশটি পরিচালনা করেন।

 

ট্রাম্প জানিয়েছেন, স্বাক্ষরিত বিবৃতির শর্ত অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্র এখনই সেনাবাহিনী সরিয়ে নেবে না। তবে দক্ষিণ কোরিয়ার সাথে নিয়মিতভাবে আয়োজন করা যৌথ সামরিক মহড়া দেয়া বন্ধ করবে তারা। নিয়মিত এসব সামরিক মহড়ার কারণে ক্ষুব্ধ ছিল উত্তর কোরিয়া।

 

উত্তর কোরিয়ায় যুদ্ধবন্দী মার্কিন সেনাসদস্যদের ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে জানিয়ে ট্রাম্প বলেন, আজকে এ বিষয়ে আমি জিজ্ঞেস করেছি এবং আশানুরূপ উত্তর পেয়েছি। এছাড়া কিমের সঙ্গে ‘অপেক্ষাকৃত সংক্ষেপে’ মানবাধিকার সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানান ট্রাম্প।

 

উত্তর কোরিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার বিষয়ে ট্রাম্প বলেন, আমরা যখন পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের বিষয়ে সম্পূর্ণ নিশ্চিত হতে পারবো তখনই উত্তর কোরিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হবে। আমি আসলে এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে চাই। তবে পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ সম্পর্কে পুরোপুরি নিশ্চিত না হয়ে এই পদক্ষেপ নিতে চান না তিনি।

 

উত্তর কোরিয়ার নেতা এবং কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্টের মধ্যে এটি প্রথম বৈঠক। বিশ্লেষকরা বলছেন, যৌথ ঘোষণায় তেমন গুরুত্বপূর্ণ কিছু নেই। তবে তাদের অনেকই মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের একজন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দ্বিপাক্ষীয় বৈঠক উত্তর কোরিয়ার জন্য কূটনৈতিক বিজয়।

 

ট্রাম্প আজ সন্ধ্যা ৭টায় এয়ার ফোর্স ওয়ানে করে সিঙ্গাপুর ছাড়বেন। অপর দিকে দুপুরেই চুক্তি সইয়ের পর দ্বীপ ছেড়ে গেছেন কিম জং-উন ও তার সফর সঙ্গীরা। সূত্র: বিবিসি

Leave a Reply

Your email address will not be published.