মাগুরা শ্রীপুরে যে গ্রামে থাকে দেড় শতাধিক “ডিজিটাল প্রতারক”

শ্রীপুর

মাগুরা সংবাদ:

শ্রীপুর (মাগুরা)প্রতিনিধি:

মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার দারিয়াপুর ইউনিয়নের মহেশপুর গ্রামে দেড় শতাধিক তরুণ ও যুবকের সমন্বয়ে একটি সংঘবদ্ধ “ডিজিটাল প্রতারক” চক্র গড়ে উঠেছে। তবে এ চক্রটির উৎপত্তি পার্শ্ববর্তী ফরিদপুরের ডুমাইন হলেও বর্তমানে শীর্ষে রয়েছে মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার মহেশপুর গ্রামটি। চক্রটি মুঠোফোনে আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকদের প্রতারণার ফাঁদে ফেলে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়। এসব করে তারা খুব অল্প সময়ের মধ্যে প্রচুর অর্থ বিত্তের মালিক হয়েছে। স্থানীয়ভাবে তারা টোপ পার্টির সদস্য হিসেবে পরিচিত।

সরেজমিনে এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার মহেশপুর গ্রামের পাঞ্জু আলী, তপন, বিপ্লব শেখ, আশরাফুল শেখ, সামাদ, হামিদুল, কামরুল, অন্তর শেখ, রুবেল শেখ, ইলিয়াজ খাঁ, রাজু মণ্ডল, আল-আমিন মণ্ডল, বছির মোল্যা, মেহেদী মণ্ডল, ফরিদ জোয়ার্দার, রাব্বী বিশ্বাসসহ একাধিক যুবকের নামে বিভিন্ন থানায় ডিজিটাল প্রতারণা মামলা রয়েছে। এদের দেখাদেখি ওই গ্রামের প্রায় দেড় শতাধিক তরুণ ও যুবক এ প্রতারণার সাথে জড়িয়ে পড়ছে। গড়াই নদীতে ছোট ছোট নৌকায়, কলাবাগানে ও বিভিন্ন ঝোপ-ঝাড়ের মধ্যে ছোট ছোট টোং ঘর বানিয়ে কল সেন্টারের নামে ফোন করে প্রতারণা করে। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের গ্রাহকের কাছ থেকে পিন কোড নিয়ে মুহূর্তের মধ্যে একাউন্ট থেকে টাকা স্থানান্তর করে ব্যালেন্স ‘জিরো’ বানিয়ে দেয়।

নিভৃত পল্লিতে এভাবে প্রতারণা করে কাঁচা বাড়ির স্থানে নির্মাণ করেছে পাঁকা দালান। প্রতারক শুধু এক বাড়িতে নয়, আশপাশের প্রায় দেড় শতাধিক বাড়িতে গড়ে উঠেছে মোবাইল এ প্রতারক চক্র। প্রতারণা করা তাদের পেশা এবং এদের খুব একটা গ্রামের বাইরে যেতে হয় না।নিভৃত পল্লিতে বাড়ি হওয়ায় এসব বাড়ি থেকে প্রতারকদের সহজে আটক বা গ্রেফতার করতে পারে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই গ্রামের এক যুবক বলেন, মহেশপুর গ্রামের প্রায় দেড় শতাধিক তরুণ ও যুবক কয়েক বছর ধরে মোবাইলে প্রতারণা করে আসছে। পুলিশ ধরে নিয়ে গেলেও তারা ছাড়া পেয়ে আবারো একই কাজে জড়িয়ে পড়ছে।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত বিপ্লব শেখ ক্যামেরার সামনে বক্তব্য দিতে রাজী হয়নি। পরে তিনি মুঠোফোনে বলেন, আমি এ কাজের সাথে জড়িত না। তবে থানা থেকে পুলিশ আসলে তিনি ক্যামেরার সামনে বক্তব্য দিবেন বলে জানান।

অভিযুক্ত রাসেল শেখ বলেন, আমি অনাকাঙ্ক্ষিত কারণে এ কাজের সাথে জড়িয়ে পড়েছিলাম। এ ঘটনায় আমার নামে একটি মামলা হওয়ার পর থেকে আমি আর এ কাজ করি না।

এলাকায় সাংবাদিকদের উপস্থিতি দেখে অভিযুক্ত পাঞ্জু আলী ও তপন শেখ দ্রুত এলাকা থেকে সটকে পড়েন।

ঢাকার কাফরুল থানার পূর্ব শেওড়া পাড়ার বাসিন্দা প্রতারণার শিকার ডা. নাজনীন রশীদ শিউলী মুঠোফোনে জানান, বিকাশ প্রতারক চক্র সুকৌশলে আমার পিন কোড নিয়ে আমার কাছ থেকে ৮৯ হাজার ৮ ‘শ ৫৬ টাকা ৭৩ পয়সা হাতিয়ে নিয়েছিল। এ বিষয়ে আমি কাফরুল থানায় একটি মামলা করি। মামলা চলমান রয়েছে।

এদিকে শ্রীপুর উপজেলার সচেতন মহলের দাবি, একটি গ্রামে এতগুলো তরুণ ও যুবক অপরাধে জড়িয়ে পড়ার ঘটনা স্বভাবিক নয়। নিশ্চয় সেখানকার সামাজিক ও প্রশাসনিক নজরদারির অভাব রয়েছে। কারণ সামাজিক নজরদারি কম থাকলে সেখানকার মানুষের অপরাধে জড়িয়ে পড়ার প্রবণতা বেড়ে যায়। তবে কেন একটি গ্রামে এতগুলো তরুণ ও যুবক অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়েছে তার কারণ অনুসন্ধানে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করে পর্যালোচনা জরুরি। এ ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর বাহিনীর সমন্বিত পদক্ষেপ লাগবে।

এ বিষয়ে মাগুরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) দেবাশীষ কর্মকার বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের অভাবে অপরাধীরা পার পেয়ে যাচ্ছে। তবে এসব অপরাধীদের সাথে জড়িত রয়েছেন বিভিন্ন মোবাইল অপারেটরের অসাধু ব্যবসায়ীরা। প্রতারক চক্র ভূয়া এনআইডি কার্ডের মাধ্যমে মোবাইল সিম ক্রয় করে এবং অবৈধ বিকাশ একাউন্টের মাধ্যমে প্রতারণা করছে। তবে ওই এলাকায় প্রশাসনের বিভিন্ন সংস্থা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে। মাগুরা জেলা পুলিশের পক্ষ থেকেও ওই এলাকায় নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.